তৈরি পোশাক খাতে বিদেশি সফটওয়্যারকে টেক্কা দিতে পারে এমন সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেই। অনন্যবৈশিষ্ট্য ও নতুন প্রযুক্তির সেই সফটওয়্যারের যাত্রা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও মাদাগাস্কারেও। চার বছর ধরে গবেষণা ও উন্নয়নের পর দেশের তরুণেরা তৈরি করেছেন এই সফটওয়্যার। এই দেশি সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান প্রাইডসিস আইটির উদ্যোক্তা মনোয়ার ইকবাল।
প্রাইডসিস গবেষণা আর উন্নয়নে গুরুত্ব দেয় বেশি। পণ্য নিখুঁত বা টেকসই না হলে প্রতিযোগিতার বাজারে আস্থা অর্জন করে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এটাই তাদের মূলমন্ত্র। তাই তারা পণ্য শতভাগ প্রস্তুত করে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে বাজারে ছাড়ে।
কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সফটওয়্যার উদ্যোক্তা মনোয়ার ইকবালের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরে। ২০০১ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি জুনিয়র প্রোগ্রামার হিসেবে ৬ হাজার টাকা বেতনে একটা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। চাকরির অভিজ্ঞতা তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজে এসেছে। ২০১৩ সালে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন হঠাৎ করে। শুরুতে কোনো রকম চলার মতো গ্রাহকের ব্যবস্থাও হয়ে যায়। প্রকল্প সফল করতে নিয়োগ দেওয়া হয় খালেদ, সজিব ও লিপুকে। এ সময় সাহায্য পেয়েছেন সাইনেসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ এবং মাহমুদ গ্রুপের কর্মকর্তাদের। শুরুতে কোনো অফিস ছিল না। গ্রাহকের দেওয়া ছোট্ট একটা টেবিলই ছিল অফিস। এই ছোট্ট টেবিল থেকেই শুরু হয় প্রাইডসিস আইটির স্বপ্নযাত্রা।
প্রথম দিকে ছোট কিছু প্রকল্প করলেও পরে মনোয়ার ইকবাল মনোযোগ দেন ইআরপি সফটওয়্যার তৈরিতে। তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা ও বাজার যাচাই করে তিনি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উপযোগী সফটওয়্যার তৈরিতে কাজ শুরু করেন। এই খাতে পুরোপুরি একক সমাধান দিতে পারে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তখন ছিল না। বিদেশি সফটওয়্যারের খরচও বেশি ছিল। দেশি ইআরপি সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে আস্থা অর্জন চ্যালেঞ্জ ছিল।
পরে মাহমুদ গ্রুপে বিদেশি সফটওয়্যার গ্রুপের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে প্রকল্প পায় প্রাইডসিস। চুক্তি হয় ২ কোটি টাকার। তিন বছরের মধ্যে মাহমুদ গ্রুপের ১০টি কোম্পানি পুরোপুরি ইআরপি সফটওয়্যারের আওতায় আসে। এরপর প্রাইডসিস আরও প্রোগ্রামার নিয়োগ দেয়। উত্তরায় দুই কক্ষের একটা অফিস নেওয়া হয়। এরই মধ্যে আরও কিছু নতুন প্রকল্প যুক্ত হয়। দেশের মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ইআরপি সেবা দেওয়ার চুক্তি হয়। এরপর নতুন অফিস নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কারওয়ান বাজারে শুরু হয় নতুন অফিস। প্রাইডসিস এরপর তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের জন্য ‘প্ল্যানিং অ্যান্ড কাটিং’ সফটওয়্যার তৈরিতে কাজ শুরু করে। প্রথম চার বছরে মাত্র পাঁচজন গ্রাহকের কাজ করেছিল প্রাইডসিস। তবে এরপর থেকে গ্রাহক বাড়তে থাকে। শুরু হয় দেশের বাইরের কাজ।
প্রাইডসিসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) ওমর ফারুক বলেন, প্রাইডসিস তাদের সফটওয়্যার নিয়ে মাদাগাস্কারের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস গ্রুপের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। সেখানে অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রেও কাজের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। নতুন ডোমেইন হিসেবে বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের অন্যতম একটি বড় রোবটিকস প্রতিষ্ঠানের জন্য রোবটের চোখের সফটওয়্যার তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে। দেশের ও বিদেশের উপযোগী অনেক অ্যাপ ও ফেসবুকের মতো যোগাযোগের ওয়েবসাইট প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন থাইল্যান্ডের এক কোম্পানির অফশোর ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার নিয়ে কাজ চলছে। নতুন প্রযুক্তি হিসেবে বিজনেস ইনটেলিজেন্স, ব্লকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তির গবেষণার কাজও চলছে। জাপানে শুরু হচ্ছে বিগ ডেটা নিয়ে কাজ।
মনোয়ার ইকবালি বলেন, বর্তমানে দোতলার অফিসে ১০০ জনের বেশি সদস্য কাজ করছেন। এ ছাড়া আরও ৩টি সাপোর্ট সেন্টার আছে। ২০১৮ সালে বেসিসের জাতীয় পুরস্কার, ওয়ার্ল্ড সামিট পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা।
সূত্র : লেখক মিন্টু হোসেন (প্রথম আলো)